শিশুরা হল মানব ফুল। স্নিগ্ধতা ও কোমলতার প্রতীক। ফেরেশতার মত পবিত্র ও নিষ্পাপ। পৃথিবীর সমস্ত শিশুরা এক জাত এবং সবার আদর ও স্নেহ পাবার অধিকারী। শিশুদের ব্যাপারে কোন বৈষম্য নেই। অথচ শিশুদের সাথে অনেকে খারাপ আচরণ করে, নির্যাতন করে এবং কষ্ট দেয়। কোথাও কোথাও যুদ্ধের নামে শিশুদেরকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়! মানবতার এ এক ভয়ানক অবক্ষয়।

আমাদের এক পরিচিত লোক শিশুদের সাথে খারাপ আচরণ করে। কোন ছোট্ট বাচ্চাকে দেখলে লোকটি তার কান মলে দেয় এবং চিমটি দিতে থাকে। এতে বাচ্চারা কষ্ট পায় ও বিরক্ত হয়। এটি অত্যন্ত বাজে একটি স্বভাব। যা অনেকের মাঝেই দেখতে পাওয়া যায়।

শিশুরা সবার কাছে যায় না এবং সবার কোলে উঠে না। শিশুরা যদি আপনার কাছে আসতে চায়, আপনার সাথে খেলতে চায় এবং আপনাকে পছন্দ করে, তাহলে নিজেকে আপনি ভালো মানুষ ভাবতে পারেন। অবশ্য এমন অনেক ভালো মানুষও আছে যাদেরকে শিশুরা পছন্দ করে না। যেমন- আমাদের এক চাচা ছিলেন যিনি অত্যন্ত ভালো কিন্তু শিশুরা তার কাছে ঘেঁষতো না। তিনিও এ নিয়ে আফসোস করতেন। আমরা চাচাকে কৌতুক করে বলি- আপনি বরং চেহারাটা পাল্টে দেখতে পারেন।

অনেকে হ্রাস-ভারী এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ফলে শিশুরা তাদের কাছে আসতে চায় না। এটা আবার দোষের কিছু নয়। শিশুরা চায় তাদের মত শিশু কাউকে। যে নিজের গাম্ভীর্যভাব বর্জন করে হাঁটু গেঁড়ে তাদের সমান হয়ে যাবে এবং তাদের সাথে খেলতে আরম্ভ করবে। তরল না হলে শিশুরা কারো সাথে মিশে না। মোটকথা শিশুদের সামনে ব্যক্তিত্ব প্রদর্শন করা অর্থহীন।

শিশুদের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া কি জরুরী? আমরা বলি- হ্যাঁ, এটা অত্যন্ত জরুরী। কেননা শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদের সাথে মিশতে হবে। তাছাড়া আপনি যদি স্নিগ্ধতাকে ভালোবাসেন এবং প্রাণ জুড়াতে চান, তাহলে শিশুদের সাথে মেশা উচিৎ। তারা আপনার মন ভালো করে দিবে, আপনাকে উচ্ছলতা শিক্ষা দিবে এবং আরও শিক্ষা দিবে কিভাবে নিরুদবেগ থাকা যায়। যদি আপনার ঘরে কোন শিশু সন্তান থাকে, তাহলে তাকে কাছে টানুন, তার সাথে খেলাধুলা করুন এবং তাকে আনন্দিত করুন। দেখবেন, তার সাথে আপনার সম্পর্ক আপনাকেও আনন্দিত করবে এবং ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

কেউ কেউ শুধুমাত্র নিজের শিশু সন্তানকে ভালোবাসেন। অন্য শিশুকে দেখলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এটা মোটেও উচিৎ নয়। আমাদের উচিৎ- সম্পর্কে যা হোক না কেন, শিশু মাত্রই তাকে আদর করা, স্নেহ করা এবং তার সাথে মিষ্টি করে কথা বলা। যারা অন্য শিশুদের দেখতে পারে না, তাদের এ কথা চিন্তা করা উচিৎ -যদি অন্যকেউ তার শিশু বাচ্চার সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলে বা ধমকি দেয়, তাহলে তার কাছে কেমন লাগবে? কাজেই শিশু মাত্রই তাকে ভালোবাসা সবার কর্তব্য।

একদিন দেখলাম- এক শিশু মসজিদে হাফপ্যান্ট পরে এসেছে। সেজন্য একজন তাকে খুউব ধমকাচ্ছে। লোকটি শিশুটিকে জোরকরে মসজিদ থেকে বের করে দিতে চাইছিলো। আমরা তাকে থামালাম। তাকে বললাম- আপনি কাজটি ঠিক করছেন না। আমাদের দেশে প্রায়ই কিছু লোক এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকে যা খুবই নিন্দনীয়।

শিশুদের যে কোন সমস্যাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তাদের খেলা-ধুলা, লেখাপড়া এবং সাধ্যানুযায়ী নিরাপদ ও সুন্দর জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে সময় দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। শিশুদেরকে কষ্ট দেওয়া, তাদেরকে বিরক্ত করা, তাদের আবদার না শুনা এবং তাদেরকে ধমকি দেওয়া বিবেকহীন মানুষের কাজ। রাসূলুল্লাহ সা. শিশুদের সামনে নিজের হাঁটু গেঁড়ে বসতেন এবং তাদের সাথে গলাগলি করতেন। তিনি তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতেন, তাদের আবদার রক্ষা করতেন এবং তাদের গালে চুমু খেতেন। যারা শিশুদেরকে ভালোবাসে না তারা আল্লাহর দয়া বঞ্চিত মানুষ বলে তিনি ঘোষণা করেছেন।

 

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন…

 

Spread the love