পর্দা নিয়ে প্রায়ই কথা হয়, আলোচনা হয় এবং সমালোচনাও হয়। আমরা যে যার নিজস্ব মত অনুযায়ী এর ব্যাখ্যা এবং অপব্যাখ্যা করে থাকি। অথচ আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এটিকে যদি ইসলামের বিধান হিসাবে আমরা ব্যাখ্যা করতে চাই, তাহলে সবাইকে অবশ্যই কোরআন এবং সুন্নাহর দ্বারস্থ হতে হবে। হ্যাঁ, সত্যিই কিছু লোক পর্দাকে ‘তাঁবু’ বলে উপহাস করে থাকে এবং আবার কিছু লোক ‘মনের পর্দা বড় পর্দা’ বলে একে সীমিত অর্থে প্রয়োগ করতে চায়। অথচ পর্দা এত কঠোর এবং এত শিথিল পর্যায়ের কোন বিষয় নয়। বরং তা মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা এমন একটা বিষয় যা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত প্রাইভেসি এবং নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে থাকে।
পর্দা নিয়ে আমার কিছু কাজ রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় এ বিষয়ে লেখালেখি করেছি, যার অংশ হিসাবে একটি জাতীয় দৈনিকে এ সম্পর্কিত আমার দুটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল। কাজেই পর্দা সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি আমি সংক্ষেপে এখানে পেশ করতে চাই যাতে সম্মানিত ভাই ও বোনেরা উপকৃত হন। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আমার গ্রন্থ রচনারও ইচ্ছা রয়েছে।
প্রথম বিষয় হচ্ছে- পর্দা কোন বাইন্ডিং বা সীমাবদ্ধতা নয়! অধিকাংশ নারীরা সাধারণত এটিকে বোঝা মনে করে থাকেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ‘নারী স্বাধিনতা’ হরণ বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু কোরআনের দৃষ্টিতে পর্দা হল নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অত্যন্ত কার্যকর সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত প্রাইভেসি বা গোপনীয়তার একটি বিশেষ উপাদান। এটি এ অর্থে যে, নারী-পুরুষ পরস্পর অত্যন্ত গভীরভাবে আকর্ষিত হয়ে থাকে এবং একে অন্যের গোপনীয়তা লংঘন করতে চায়। খুব দ্রুত কাছে আসতে চায় এবং কোনপ্রকার বাছবিচার ছাড়াই পরস্পর ঘনিষ্ঠ হতে চায়। ফলে বলা হয়েছে, বাসা-বাড়ি এবং পোশাক-আশাক যেন এমন খোলামেলা না হয় যাতে বিপরীত দিক থেকে পরস্পরের শ্লীলতাহানির আশংকা থাকে। পর্দা সংক্রান্ত মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের আয়াতসমূহ গভীর মনোযোগের সাথে পাঠ করলে এমন উপলব্ধিই অর্জিত হবে।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- পর্দা শুধু পোশাকের মাঝে সীমাবদ্ধ -এমন ধারণা মোটেও সঠিক নয়। পোশাক হল পর্দার একটি উপকরণ মাত্র। বরং এর রয়েছে আরও বিস্তৃত উপায়-উপকরণ ও পরিসর এবং সে সব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পোশাকের মাঝে পর্দাকে সংকীর্ণ করে ফেলা যায় না। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত যে, যিনি নিজের অন্তরকে কুরুচিপূর্ণ ভাবনা থেকে সেইফ রাখছেন তিনি পর্দা করছেন; যিনি কুরুচিপূর্ণ বিষয় থেকে নিজের চোখ, কান, নাক, হাত, পা ও গোপনাঙ্গকে সেইফ রাখছেন তিনি পর্দা করছেন; যিনি নিজের রূপ-সৌন্দর্য বা দেহ সৌষ্ঠবকে অন্যের কুদৃষ্টি বা কামনা-বাসনা থেকে সেইফ রাখছেন তিনি পর্দা করছেন। এমনকি যিনি নিজের সেইফটি বা নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়ি নির্মাণ করছেন এবং সে বাড়িতে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা কক্ষ তৈরী করছেন তিনিও পর্দা করছেন -হোন তিনি মুসলিম কিংবা অমুসলিম।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা শুধু জামা-কাপড় দিয়ে দেহকে আবৃত করার মাঝে সীমাবদ্ধ নয় এবং ইচ্ছে হলেই কেউ এটিকে অস্বীকার করতে পারে না। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এর পক্ষ থেকে যে পর্দার কথা বলা হয়েছে, তা শুধু মানুষের প্রতি অঙ্গে অঙ্গে নয় বরং জীবনের প্রতি পদে পদে জড়িত। কে আছে এমন যে, তার দেহ ও মনের নিরাপত্তা চায় না? কে আছে এমন যে, ঘরে তার নিজের আলাদা একটি রুম থাকুক তা চায় না? কে আছে এমন যে, তার গোপনীয়তা অন্যের কাছে প্রকাশ হয়ে যাক তা পছন্দ করে? কে আছে এমন যে, নিজের সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি নষ্ট হোক তা চায়?