মুসলিমদের জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে ‘মধ্যমপন্থা’ অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক মূলনীতি [উসূল]। বিশেষকরে পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে এ মূলনীতি অনুসরণ করা সকলের কর্তব্য। পরিবারে অতিরিক্ত কঠোরতা ও অতিরিক্ত উদারতা -উভয়টিই ক্ষতিকর। বরং কল্যাণকর হল এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থান অর্থাৎ মধ্যমপন্থা অনুসরণ করা। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহয় এটি ব্যাপকভাবে প্রত্যক্ষ করা যায় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. সকল বিষয়ে মধ্যমপন্থা অনুসরণ করাকে পছন্দ করেন। যেমন, আইন ও বিচার ব্যবস্থা, খিলাফাহ বা প্রশাসন, নেতৃত্ব ও কতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

মধ্যমপন্থা বলতে সংক্ষেপে যে কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিহার করে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত অবস্থান গ্রহন করাকে বুঝানো হয়। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে ‘ইমামুল ওয়াসাতিয়্যাহ’ বা মধ্যমপন্থার ইমাম হিসেবে পরিচিত ড. ইউসূফ আল-কারযাভী’র বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফিকহুল ওয়াসাতিয়্যাহ’ তে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দকে গ্রন্থটি পাঠ করে নেয়ার অনুরোধ রইলো। (সম্প্রতি এটি ‘মধ্যমপন্থা কি, কেন, কিভাবে’ শিরোনামে বাংলায় অনুদিত হয়েছে।)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য যে দ্বীন ও শরীয়াহ প্রদান করেছেন, তা প্রবলভাবে এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ ইসলাম একটি মধ্যমপন্থি দ্বীন বা জীবন বিধান। ইসলামী শরীয়াহর প্রতিটি হুকুমে যেমন মধ্যমপন্থা অনুসরণ করা হয়েছে, অনুরূপভাবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিম জাতিকে সর্বদা মধ্যমপন্থা অনুসরণ করে চলতে বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এ মূলনীতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,

وَ کَذٰلِکَ جَعَلۡنٰکُمۡ اُمَّۃً وَّسَطًا لِّتَکُوۡنُوۡا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِ وَ یَکُوۡنَ الرَّسُوۡلُ عَلَیۡکُمۡ شَهِیۡدًا

অর্থঃ আর এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানুষের জন্য অনুকরণীয় হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য অনুকরণীয় হন। [সূরা বাকারা : ১৪৩]

এই আয়াতে সকল প্রকার পরিচালনগত বিষয়ে মুসলিম উম্মাহকে মধ্যমপন্থা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ফলে ইসলামী আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং খিলাফাহ’র (প্রশাসনের) সকল পর্যায়ে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে কঠোরতা ও উদাসিনতাকে পরিহার করা হয়েছে; যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত কোরআন, সুন্নাহ ও সীরাতে রয়েছে। আর এমনিভাবে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সহজ-সরল ও জীবনঘনিষ্ঠ দ্বীনে পরিণত হয়েছে।

পরিবার মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। যা শক্তিশালী কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত। যেখানে নেতৃত্ব ও কতৃত্বের বিরাট দায়-দায়িত্ব রয়েছে এবং পরিচালনগত বিভিন্ন দিক বিদ্যমান। ফলে পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থান গ্রহন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফলপ্রসূ নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর পন্থা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। সংক্ষেপে, পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহন করার নাম হল- মধ্যমপন্থা।

পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অনুসরণের দৃষ্টান্ত স্বরূপ মোট ৩টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করা জরুরী। যে ৩টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য সকল দিক বিবেচনায় যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত। যথা-

১. ন্যায়নীতি অনুসরণ করা।

২. কঠোরতা পরিহার করা।

৩. উদাসীনতা বর্জন করা।

 

◾ন্যায়নীতি অনুসরণ করাঃ ন্যায়নীতি বলতে পরিবারে আদল ও ইনসাফ কায়েম করা। প্রত্যেককে যার যার প্রাপ্য সম্মান, স্নেহ ও অধিকার যথাযথভাবে প্রদান করা এবং পরিবারে শাসন ও সোহাগের মাঝে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকা এবং সীমালঙ্ঘন না করা। ন্যায়নীতি অনুসরণের নির্দেশ প্রদান করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

وَ اَقِیۡمُوا الۡوَزۡنَ بِالۡقِسۡطِ وَ لَا تُخۡسِرُوا الۡمِیۡزَانَ

অর্থঃ আর তোমরা ন্যায়ের পাল্লা প্রতিষ্ঠিত করো আর ন্যায়ের পাল্লা লংঘন করো না। [সূরা আর-রহমান : ৯]

পরিবারে নারী-পুরুষের ন্যায়সঙ্গত অবস্থান সম্পর্কে বলা হয়েছে,

وَ لَهُنَّ مِثۡلُ الَّذِیۡ عَلَیۡهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۪ وَ لِلرِّجَالِ عَلَیۡهِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ

অর্থঃ আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে, যেমন রয়েছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের বাড়তি মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সূরা বাকারা : ২২৮]

পরিবারস্থ লোকদের সাথে ন্যায়নীতি অনুসরণ ও উত্তম আচরণের নির্দেশ প্রদান করে অন্যত্র বলা হয়েছে,

اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ

অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচার, সদাচরণ ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। [সূরা নাহল : ৯০]

 

◾কঠোরতা পরিহার করাঃ
পরিবারে মধ্যমপন্থা অনুসরণের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, কঠোর না হওয়া বা রূঢ় আচরণ না করা। অর্থাৎ ইসলামী শরীয়াহ বাধ্য করে না অথবা বাধা দেয় না, এমন বিষয়ে পরিবারস্থ লোকদের বাধ্য করা অথবা তাদের উপর অন্যায়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া। যেমন, নির্দিষ্ট কোন পেশা বা চাকুরি গ্রহনে বাধ্য করা, নির্দিষ্ট কোন স্থানে বসবাস করতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া, রূঢ় আচরণ করা ইত্যাদি।

পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বদা অনুসরনীয় নীতি হল, ইসলামী শরীয়াহর সীমারেখার মধ্যে থেকে পরিবার ব্যবস্থাপনাকে সহজ ও সাবলীল করা। যা মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পছন্দনীয় নীতি। কোরআনে এ মর্মে বলা হয়েছে,

یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫

অর্থঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং তিনি তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। [সূরা বাকারা : ১৮৫]

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

يسروا ولا تعسروا، وبشروا ولا تنفروا

অর্থঃ সহজ করো, কঠিন করো না। অনুপ্রাণিত করো, ভীতি ছড়িয়ো না। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম]

পরিবারস্থ লোকদের সাথে কঠোর হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَ شَاوِرۡهُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ

অর্থঃ যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনাকে ছেড়ে চলে যেতো। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। [সূরা আলে ইমরান : ১৫৯]

বিশ্বের অন্যতম বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত হজরত লোকমান আ. তাঁর পুত্রকে পরিবারস্থ লোকদের প্রতি কোমল ও নমনীয় আচরণ করার উপদেশ দিয়েছেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

وَ لَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ

অর্থঃ আর তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল বাঁকা করো না এবং জমীনে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। [সূরা লোকমান : ১৮]

হজরত লোকমান উপদেশ স্বরূপ আরও বলেছেন,

وَ اقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِکَ وَ اغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ ؕ اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ

অর্থঃ আর তুমি তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু করো; নিশ্চয় সুরের মধ্যে গাধার সুরই সবচেয়ে অপ্ৰীতিকর। [সূরা লোকমান : ১৯]

মোটকথা, পরিবারস্থ লোকদের সাথে সর্বদা সহনশীল ও নমনীয় আচরণ করা। রূঢ় বা কঠোর আচরণ না করা। স্নেহ-মায়া-মমতা ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রেখে সবাইকে উত্তমরূপে লালন-পালন করা।

 

◾উদাসীনতা বর্জন করাঃ

পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে উদাসীনতা বর্জন করার অর্থ হল- অন্যায়, পাপাচার, অশ্লীলতা, অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতা পরিহার করা। সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অন্যায় কাজে বাধা দেওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ

অর্থঃ তোমরা সর্বোত্তম উম্মাহ, মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। [সূরা আলে ইমরান : ১১০]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। আর তারাই হবে সফলকাম। [সূরা তাওবাহ : ১০৪]

পরিবারে নারী-পুরুষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যদিয়ে সৎকর্ম সম্পাদন করবে এবং অন্যায় ও অশ্লীল কাজ পরিহার করে চলবে। এ মর্মে বলা হয়েছে-

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

অর্থঃ মু’মিন নারী ও পুরুষ একে অপরের বন্ধু; তারা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে, নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। এঁদের প্রতিই আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। [সূরা তাওবাহ : ৭১]

সৎ কাজে সহযোগিতা করা এবং অন্যায় ও অশ্লীল কাজে সহযোগিতা না করার নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে,

وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ

অর্থঃ সৎ কাজ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা করো কিন্তু অন্যায় ও অশ্লীল কাজে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। [সূরা মায়েদাহ : ০৫]

পরিবারে অন্যায় ও অশ্লীলতা বিস্তারকারিকে হাদীস শরীফে ‘দাইয়ূস’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. এমন ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন,

لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ

অর্থঃ দাইয়ূস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [মিশকাত]

সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! দাইয়ূস কে? উত্তরে রাসুলূল্লাহ সা. বললেন,

الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ

অর্থঃ ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ূস বলা হয়, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়। [মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ]

ইমাম আযযাহাবী রহ. বলেন, ‘দাইয়ূস’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর অন্যায় কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলে-মেয়েদের কারণে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছু নেই। [আল-কাবাইর, ১/৫০ পৃঃ]

পরিবার পরিচালনায় উদাসীনতার আরেকটি লক্ষণ হল, অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতা করা। পবিত্র কোরআনে অপচয় ও অপব্যয়কে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে পরিহার করে চলার নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে,

یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

অর্থঃ হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাজে সুন্দর পোশাক পরিধান করো, আর খাও এবং পান কর। তবে অপব্যয় ও অপচয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না। [সূরা আল-আরাফ : ৩১]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ،

অর্থঃ তুমি অপচয় করবে না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। [সূরা বনী ইসরাঈল২৬-২৭]

অপচয় ও কৃপণতা না করে বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থান ‘মধ্যমপন্থা’ অবলম্বন করার নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে,

وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا،

অর্থঃ আর তুমি তোমার হাত গলায় বেড়ী করে রেখো না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে। [সূরা বনী ইসরাঈল : ২৯]

ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অনুসরণের জন্য আরও পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে,

وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا

অর্থঃ তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে। [সূরা ফুরকান : ৬৭]

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

كُلُوا وَاشْرَبُوا وَتَصَدَّقُوا وَالْبَسُوا غَيْرَ مَخِيلَةٍ وَلاَ سَرَفٍ

অর্থঃ তোমরা খাও, পান কর, দান কর এবং পরিধান কর, তবে অহংকার ও অপচয় করো না। [মুসনাদে আহমাদ]

বিলাসিতার পরিণতি সম্পর্কে বলা হয়েছে,

وَإِذَا أَرَدْنَا أَنْ نُهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيْهَا فَفَسَقُوْا فِيْهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيْرًا،

অর্থঃ আর যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন সেখানকার পরিচালকদের নির্দেশ দেই। অতঃপর তারা সেখানে পাপাচারে মেতে ওঠে। ফলে তার উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি সেটিকে ধবংস করে দেই। [সূরা বনী ইসরাঈল : ১৬]

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,

فِرَاشٌ لِلرَّجُلِ وَفِرَاشٌ لاِمْرَأَتِهِ وَالثَّالِثُ لِلضَّيْفِ وَالرَّابِعُ لِلشَّيْطَانِ

অর্থঃ একটি বিছানা স্বামীর জন্য, আরেকটি স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানের জন্য আর চতুর্থটি শয়তানের জন্য। [সহীহ মুসলিম]

 

 

Spread the love