ইসলামী শরীয়াহর প্রধানতম লক্ষ্য হল মানুষের জীবন রক্ষা করা। অর্থাৎ জীবনের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও জীবনের উৎকর্ষ সাধন করা। প্রতিটি মানুষকে তার জীবনের কাঙ্ক্ষিত ও নৈতিক লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করা। এ মহান উদ্দেশ্যের দিকেই শরীয়াহর সমস্ত আইন পরিচালিত হয়। উসূলবিদগণ এ বিষয়টি সর্বত্র অত্যন্ত সার্থকতার সাথে চিহ্নিত করেছেন এবং তাঁরা বিভিন্নগ্রন্থে এটি পরিস্কারভাবে তুলে ধরেছেন। এজন্য জীবন রক্ষার প্রশ্নে দ্বীনের বিভিন্ন হুকুমে পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী আংশিক মুলতবি বা পূর্ণ মুলতবি অথবা আংশিক শীথিলতা বা পূর্ণশীথিলতা প্রদান করতে দেখা যায়। যেমন-
১. কারো প্রাণনাশের আশংকা দেখা দিলে মুসলিম পরিচয় গোপন রাখার সুযোগ রয়েছে।
২. চরম অসুস্থতার সময় রোজা ভাঙ্গার সুযোগ রয়েছে।
৩. প্রচন্ড শীতে প্রাণ নাশের আশংকা দেখা দিলে পানি ব্যবহার না করে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা যায়।
৪. একই কারণে ফরজ গোসলের পরিবর্তে শুধুমাত্র অজু বা তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করা যায়।
৫. নারীদের পিরিয়ডের সময় কষ্টজনিত কারণে নামাজ আদায় করতে হয় না।
৬. পিরিয়ড চলাকালীন সময় নারীদের রোজা রাখতে হয় না।
৭. ভ্রমনকালীন জটিলতা ও কষ্টের কারণে নামাজ-রোজা পালনে আংশিক শিথিলতার সুযোগ রয়েছে।
৮. জীবন বাঁচানো কিংবা রোগমুক্তির জন্য ডাক্তারের নির্দেশনা থাকলে পরিমিত এলকোহল গ্রহন করা যায়।
৯. বাধ্য হলে ঘুষ দেওয়া যায়।
১০. বাধ্য হলে সুদি ব্যাংকে বা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা যায়। ইত্যাদি।
উপরোল্লিখিত হুকুমসমূহের মাঝে আমরা যে প্রধান কার্যকারণটি খুঁজে পাই, তা হল মানুষের জীবন রক্ষা করা এবং যে কোন মূল্যে জীবনকে সচল রাখা। ইসলামী শরীয়াহর সুস্পষ্ট একটি মূলনীতি হল, সক্ষমতার প্রশ্নে এবং অচলাবস্থার সময় হুকুমকে রহিত করে দেওয়া কিন্তু কোনক্রমেই বোঝা চাপিয়ে না দেওয়া। এর সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ হল, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগল ব্যক্তির উপর নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ফরজ নয়।
এমনিভাবে জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে ইসলামী শরীয়াহ মানুষের উপর এমন কোন কাঠোরতা আরোপ করে না যাতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ যখন কোন বিষয়ে নিজের স্বাধীনতা হারায় এবং তাকে বাধ্য করা হয়, সেক্ষেত্রে শরীয়াহ তাঁকে ততটুকুন সুযোগ প্রদান করে যতটুকুন দ্বারা জীবন রক্ষা পায় এবং অত্যাবশকীয় প্রয়োজন পূরণ হয়। এমনিভাবে শরীয়াহ মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে এবং নিরন্তর পথনির্দেশনা দিয়ে যায়।