ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি তিনটি। যথা-
- তাওহীদ
- রিসালাত
- আখিরাত
এই তিনটি ভিত্তিকে কেন্দ্র করে ইসলামী শিক্ষা আবর্তিত হয়। এর কোনটি যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে এ শিক্ষার কার্যকারিতা আর থাকে না। সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষার মাঝে একটি গুণগত পার্থক্য হল, সাধারণ শিক্ষায় আস্তিক ও নাস্তিক উভয়ই তৈরী হতে পারে কিন্তু ইসলামী শিক্ষায় নাস্তিক তৈরী হয় না। এ শিক্ষায় ছেলে-মেয়েরা আর যা হোক তাদের সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারে এবং কম-বেশী তাঁর ইবাদত করা শিখে যায়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হয়েও যদি নাস্তিক হয়, তাহলে তার জীবন সন্দেহাতীতভাবে ব্যর্থ।
ইসলামী শিক্ষা তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের জ্ঞান দানের পাশাপাশি মানুষকে জীবনের সার্বিক বিকাশের পথ বাতলে দেয়। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে সার্থকতার সাথে বিচরণ এবং তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দিক-নির্দেশনা প্রদান করে। মানুষ যাতে জীবনের কঠিন ও দুর্গম পথ সহজে পাড়ি দিতে সক্ষম হয় এবং অস্তিত্ব বিপন্ন না হয়। জ্ঞানার্জন ব্যতীত নারী-পুরুষের সমন্বিত জীবন কোনক্রমেই সহজ ও সাবলীল হতে পারে না -এ বিষয়ে ইসলামী শিক্ষা অত্যন্ত সচেতন এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। ফলে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে:
“জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ। (সহীহ মুসলিম)”
ইসলামী শিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য হল, মানুষের যথাযথ বিকাশ সাধন করে সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটানো এবং ইহকালিন ও পরকালিন জীবনের মাঝে ভারসাম্য সৃষ্টি করা। এ লক্ষ্যে প্রথমতঃ আত্মিক পরিশুদ্ধি ঘটানো, অতঃপর সাম্য-মৈত্রী, ন্যায়বিচার, প্রেম-ভালোবাসা ও উদারতার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যাতে প্রতিটি মানুষ আত্মমর্যাদাবোধ ও স্রষ্টা প্রদত্ত সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ লাভ করতে পারে।
ইসলামী সমাজ বিনির্মানে কেউ কেউ একটি সুনির্দিষ্ট সমাজ-সংস্কৃতি অনুসরণের কথা বলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে ইসলামের সার্বজনীন শিক্ষা হল, কোন জাতির নিজস্ব সমাজ-সংস্কৃতি যদি তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত বিবেচনা বিরুদ্ধ না হয়, তাহলে ঐ সমাজ-সংস্কৃতি উপরন্তু ইসলামী শিক্ষা ও প্রগতির সোপান হতে পারে। কেননা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র আল্লাহ পাকেরই সৃষ্টি।
মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল চরিত্র। ইসলামী শিক্ষায় উত্তম চরিত্র গঠনকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়। শিষ্টাচার সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞানদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে ব্যবহারিক জীবনেও তা অনুসরণ করে, সে বিষয়ে রয়েছে বিশেষ উৎসাহ ও স্বীকৃতি। যেমন বলা হয়েছে,
“তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যার চরিত্র ভালো।”
সাধারণ শিক্ষায় উত্তম চরিত্র গড়ে ওঠা দুষ্কর। কেননা তাতে চরিত্র গঠনের প্রতি জোর দেওয়া হয় না। বাস্তবে যেখানে চরিত্রগঠনমূলক জ্ঞান দানই করা হয় না, সেখানে ব্যবহারিক চরিত্র গঠনের কি উপায় আছে? প্রশ্ন হতে পারে যে, সাধারণ শিক্ষায়তো আমরা অসংখ্য চরিত্রবান মানুষ দেখতে পাই। তাহলে তাদের চারিত্রিক উপাদান কি? এর উত্তর অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, যারা সাধারণ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে উন্নত চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে, তারা কোন না কোনভাবে ইসলামী শিক্ষার আলো পেয়েছে। কেউ হয়তো একান্ত নিজ চেষ্টায় ইসলামী শিক্ষা অর্জন করেছে। আবার কেউ হয়তো পারিবারিক ইসলামী পরিবেশের প্রভাবে চরিত্র গঠনের সুযোগ লাভ করেছে। কাজেই এ কথা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, ইসলামী শিক্ষা ব্যতীত উত্তম চরিত্র অর্জন সম্ভব নয়।