পবিত্র কোরআনে মুআজ্জিন সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
অর্থাৎ- তার কথার চাইতে কার কথা উত্তম হতে পারে যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, সৎকাজ করে ও বলে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ফুসসিলাত, ৩৩)।
রাসূূূলুল্লাহ সা. বলেন-
لا يسمع مدى صوت المؤذن جن ولا إنس ولا شيء إلا شهد له يوم القيامة
অর্থাৎ- মুআজ্জিনের আজান যতদূর পর্যন্ত পৌঁছে ততদূর পর্যন্ত যত মানব, জ্বীন ও অন্যান্য প্রাণী বসবাস করে, কিয়ামতের দিন তাদের প্রত্যেকে মুআজ্জিনের পক্ষ্যে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (সহীহুল বুখারী)।
রাসূূূলুল্লাহ সা. থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে-
من أذن سبع سنين محتسبا كتب له براءة من النار
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি ইহতিসাব সহকারে সাত বছর আজান পরিবেশন করবে, জাহান্নামীদের তালিকা থেকে তার নাম কেটে দেয়া হবে। (তিরমিজী ও ইবনু মাজাহ, ইমাম তিরমিজী বলেছেন হাদীসটি গরীব)।
কোরআন ও সুন্নাহয় মুআজ্জিনের যেই সুউচ্চ মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের মুসলিম সমাজ এখনো সে বিষয়ে সচেতন নয়। আল্লাহর দ্বীনের প্রত্যক্ষ দা‘ঈ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের ব্যাপারে অধিকাংশ লোকের চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গী অত্যন্ত ক্ষীণ। অবশ্য বোধসম্পন্ন লোকদের কথা ভিন্ন। রাসূলুল্লাহ সা. এর বিশিষ্ট সাহাবী ‘আমীরুল মুআজ্জিনীন’ হজরত বিলাল হাবাশী রা. থেকে আরম্ভ করে আজ অবধি বিশ্বে মুআজ্জিনের সংখ্যা অগণিত। যাঁদের ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনীর আওয়াজে মানুষ ঘুম থেকে জেগে যায়, সচেতন হয়ে ওঠে এবং নিজেকে দুনিয়াবী কাজ থেকে গুটিয়ে নিয়ে সালাতের জন্য আল্লাহর ঘরসমূহের দিকে ধাবিত হয়।
মুআজ্জিন শুধুমাত্র আজান পরিবেশনকারী নন! উপরন্তু তিনি হলেন আল্লাহর বান্দাহদের মধ্য থেকে সালাতের জন্য সজাগ-সচেতন হয়ে ওঠা প্রথম ব্যক্তি। যাঁকে সবার আগে সালাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়, ক্ষেত্রবিশেষে সময়মত মসজিদে পৌঁছাতে হয়, আল্লাহর ঘরকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হয়, ঘড়ির কাঁটা ধরে সঠিক সময়ে আজান পরিবেশন করতে হয় এবং এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম যেগুলো প্রতি ওয়াক্ত সালাতে একজন মুয়াজ্জিনকে সুচারুভাবে সম্পাদন করতে হয়। প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দায়িত্ব পালন করা -এ তো কঠিন এক চ্যালেঞ্জ! একজন মুয়াজ্জিনকে দৈনিক ৫ বার সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মুয়াজ্জিনের জীবনে রয়েছে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, রয়েছে সময়ানুবর্তিতা, রয়েছে পরিশ্রম, রয়েছে কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীলতা, রয়েছে দায়িত্বের প্রতি বিশেষ মনোযোগ এবং সর্বপোরি মুআজ্জিনের জীবন হল- কঠোর সাধনাপূর্ণ এক জীবন।
কর্তব্যনিষ্ঠ একজন মুআজ্জিনের জীবনে যে বহুবিধ দায়-দায়িত্ব ও ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে, আওলাদে রাসূল আল্লামা সাইয়্যেদ তাহের আহমদ জাবিরী আল-মাদানী রাহি. প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীপুরের হায়দগঞ্জে অবস্থিত কেন্দ্রীয় জামেআর সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রাক্তন মুআজ্জিন আলহাজ্ব আবদুল খালেক (রহ.)-এর জীবনে আমরা তার প্রায় সমস্ত কিছু খুঁজে পাই। আমরা তাঁর মাঝে আরো লক্ষ্য করি আল্লাহর দ্বীনের সুপ্ত ইলম (ইলমুল মা’রিফাহ) এবং পাশাপাশি আমল ও ইখলাসে ভরপুর মু’মিন জীবনের অসংখ্য গুণাবলী।
আজানে ‘বিশেষায়ণ’ (تخصيص) রীতির প্রয়োগঃ
আবদুল খালেক রাহি. সাধারণ কোন মুআজ্জিন ছিলেন না। তিনি ছিলেন ‘শাইখুল আজান’ বা ‘আজানের পণ্ডিত’। তিনি যে শুধুমাত্র সুমিষ্ট কন্ঠে আজান পরিবেশন করতেন বিষয়টি তাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তিনি মুআজ্জিন হিসাবে তাঁর আজানে যে পাণ্ডিত্যের অভিপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তাতে প্রমাণিত হয়, কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রাজ্ঞ ও সুদক্ষ একজন আলেম। তিনি প্রতি ওয়াক্ত সালাতের গুরুত্ব ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাঁর আজানে ‘তাখসীস’ (تخصيص) বা ‘বিশেষায়ণ’ রীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। [تخصيص হল একই শ্রেণীভুক্ত একাধিক ব্যক্তি বা বিষয়ের মাঝে কোন এক ব্যক্তি বা বিষয়কে যথার্থ কারণ বা গুণের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষায়িত করা বা গুণান্বিত করা]। আব্দুল খালেক (রহ.)-এর আজান বিশ্লেষণ করলে আমরা এমনটিই দেখতে পাই।
সাধারণত তাঁর সুস্পষ্ট ও সুমিষ্ট আজানের ধরণ ছিল এমন যে, যে কেউ তাতে কান পেতে রাখতে বাধ্য হতো। তথাপি তিনি জুমআর আজানকে অন্যান্য আজানের চাইতে সবসময় কিছুটা ভিন্ন সুর-তাল ও লয়ে পরিবেশন করতেন। এতে বুঝা যায়, তিনি জুমআর আজানকে অন্যান্য আজানের চাইতে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে পরিবেশন করার পক্ষপাতি ছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি ফজর ও ইশার আজানকে দীর্ঘ স্বর ও মরমী সুরে পরিবেশন করতেন, যা ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। এছাড়া রমজান মাসের প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের আজানে তিনি অনুরূপ রীতি প্রয়োগ করতেন এবং এ মাসে তাঁর আজানে আলাদা দরদ ফুটে উঠতো।
আবদুল খালেক (রহ.) জুমআ, ফজর, ইশা ও রমজান মাসে তাঁর আজানে যে ‘বিশেষায়ণ’ (تخصيص) রীতি প্রয়োগ করেছেন, তার উৎস হিসাবে তিনি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ দিক-নির্দেশনা লাভ করেছিলেন এবং সে আলোকে তিনি তাঁর আজানকে বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। আজানে তাঁর এই পথ ও পদ্ধতি দুর্লভ ও নজিরবিহীন। আসুন আমরা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে তা অনুসন্ধান ও অনুধাবন করার প্রয়াস চালাই।
আজানে ‘বিশেষায়ণ’ (تخصيص) রীতি প্রয়োগের উৎসঃ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান কর। (সূরা আন-নাহল, ১২৫)।
আল্লাহ পাকের এ নির্দেশের আলোকে আব্দুল খালেক (রহ.) তাঁর আজানে প্রজ্ঞা ও কৌশল স্বরূপ ‘বিশেষায়ণ’ (تخصيص) রীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ- তিনি জুমআ, ফজর, ইশা ও রমজান মাসের আজানকে অন্যান্য আজান থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে পরিবেশন করতেন। যাতে ঐ ওয়াক্তসমূহের দিকে মুসল্লিদের বিশেষ দৃষ্টি থাকে এবং তারা এর বাড়তি গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তাঁর উল্লিখিত আজানসমূহ বিশেষভাবে পরিবেশনের পেছনে রয়েছে কোরআন ও সুন্নাহর পর্যাপ্ত দলীল-আদিল্লাহ এবং বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত কারণ।
জুমআর আজান বিশেষায়ণ (تخصيص) এর কারণঃ
জুমআর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ
অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যখন জুমআর সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্বরণে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর। (সূরা জুমআ, ০৯)।
পবিত্র কোরআনের এ ঘোষণার আলোকে জুমআর দিন, জুমআর আজান ও জুমআর সালাত অন্যান্য দিন, অন্যান্য আজান ও অন্যান্য সালাতের চাইতে শরঈভাবে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকৃতি লাভ করে। কেননা কোরআনে অন্যকোন দিনের আজান বা সালাতের ব্যাপারে অনুরূপ তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনা আসেনি। কাজেই এ আয়াতের আলোকে তিনি জুমআর আজানকে অন্যান্য আজান থেকে বিশেষায়ণ করেছেন।
আবু দাঊদ শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. ঘোষণা করেন,
ان من أفضل أيامكم يوم الجمعة
অর্থাৎ- নিশ্চয় জুমআর দিন হল তোমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।
(কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে জুমআর গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন ‘রিয়াদুস সালিহীন’, ‘ইহয়াউ উলুমিদ্দীন’ ও শাইখ ইমাম মুতাওয়াল্লী আশশা‘রায়ী রচিত ‘ফাযাইলুল জুমআতি ওয়া আহকামিহা ফিল কুরআনি ওয়াস সুন্নাহ’ গ্রন্থসমূহ।)
আব্দুল খালেক (রহ.) কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত জুমআর দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা তাঁর আজানের মধ্যদিয়ে তুলে ধরতেন। এতে প্রমাণিত হয়- এক আজানের উপর আরেক আজানকে ‘তাখসীস’ করার রীতি প্রয়োগে তিনি কোরআন ও সুন্নাহ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ দিক-নির্দেশনা লাভ করেছেন এবং তাঁর আজানে এর বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
ফজর ও ইশার আজান বিশেষায়ণ (تخصيص) এর কারণঃ
ফজর ও ইশার ওয়াক্ত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন-
وَأَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ
অর্থাৎ- দিনের দুই প্রান্তেই সালাত কায়েম কর, আর রাতের প্রান্তভাগেও। (সূরা হুদ, ১১৪)।
এ আয়াত দ্বারা অধিকাংশ মুফাসসির দিনের শুরুভাগের সালাত বলতে ফজর এবং রাতের প্রান্তভাগের সালাত বলতে ইশার সালাতকে সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং কোরআনের এ ঘোষণা দ্বারা ফজর ও ইশার সালাতের গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুধান করা যায়।
হাদিস শরীফে এ দুই ওয়াক্ত সালাত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা. বলেন,
من صلى العشاء في جماعة فكأنما قام نصف الليل ومن صلى الصبح في جماعة فكأنما قام الليل كله
অর্থাৎ- যেই ব্যক্তি ইশার সালাত জামাআতে আদায় করবে সে অর্ধ-রাত পর্যন্ত কিয়াম করার সওয়াব লাভ করবে, আর যে ফজরের সালাত জামাআতে আদায় করবে সে সারা রাতব্যাপী কিয়াম করার সমান সওয়াব লাভ করবে। (সহীহ মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন,
أن أثقل صلاة علي المنافقين صلاة العشاء وصلاة الفجر ولو يعلمون ما فيهما لأتوهما ولو حبوا
অর্থাৎ- নিশ্চয় মুনাফিকদের উপর ফজর ও ইশার সালাত অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। অথচ তারা যদি এর গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে জানতো, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও অবশ্যই তাতে সাড়া দিতো। (সহীহ বুখারী)।
সালাতুল ফজর ও সালাতুল ইশার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যের আলোকে মুআজ্জিন আবদুল খালেক (রহ.) এ দুই ওয়াক্তের আজানকে সবসময় অন্যান্য আজানের চাইতে বিশেষ গুরুত্বের সাথে পরিবেশন করতেন।
এই দুই ওয়াক্তের আজান ‘বিশেষায়ণ’ করার পেছনে তাঁর রয়েছে আরো বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত কারণ। তা হল এই যে, ফজরের সালাতের সময় মুসল্লিগণ গভীর নিদ্রামগ্ন থাকে। ফলে তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি আজানকে প্রবলম্বিত ও অধিকতর মৃদু স্বরে পরিবেশন করতেন। যাতে ঘুমন্ত মুসল্লিরা জেগে উঠতে পারে এবং আজানের মিষ্টি-মধুর ধ্বনি তাদের মন-মস্তিষ্ককে ভালো লাগায় ভরিয়ে দেয়। অনুরূপভাবে ইশার ওয়াক্তে লোকজন সাধারণত বিশ্রাম কিংবা গাল-গপ্পে মশগুল থাকে। এমতাবস্থায় তাদেরকে সালাতের দিকে আহ্বানের উদ্দেশ্যে ইশার আজানকে তিনি বিশেষ সুরে পরিবেশন করতেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, এ সকল বাস্তবসম্মত অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি সবসময় আজান পরিবেশন করতেন।
রমজান মাসের আজান বিশেষায়ণ (تخصيص) এর কারণঃ
আবদুল খালেক (রহ.) রমজান মাসেও প্রত্যেক ওয়াক্ত আজানে বিশেষায়ণ (تخصيص) রীতি প্রয়োগ করতেন। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ মাসের পবিত্রতা, ফজিলত, মর্যাদা ও তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি এ কাজটি করতেন। যাতে পরিলক্ষিত হতো আলাদা সুর এবং বাড়তি দরদ। আসুন আমরা দেখি কোরআন ও সুন্নাহয় তাঁর মতের স্বপক্ক্ষএ রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে, যাতে তিনি এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর আজানেও তিনি তা দারুনভাবে ফুটিয়ে তুলতেন।
রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্বও মর্যাদার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন,
ياأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রমজান মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববতীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারাহ, ১৮৩)।
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ
অর্থাৎ- রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হিসাবে এবং তাতে রয়েছে সুস্পষ্ট সঠিক পথের সন্ধান ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য। (সূরা বাকারাহ, ১৮৫)।
تَنَزَّلُ الْمَلآَئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِن كُلِّ أَمْرٍ * سَلاَمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
অর্থাৎ- এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে। ফজর পর্যন্ত তাতে শান্তি ও নিরাপত্তা। (সূরা কদর, ৪-৫)।
হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সা. ঘোষণা করেন,
من قام رمضان إيماناً و احتساباً غفر له ما تقدم من ذنبه
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে সালাতে দন্ডায়মান হয়, তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহীহ মুসলিম)।
فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء، وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم
অর্থাৎ-আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। (সুনানু নাসাঈ)।
كل عمل ابن آدم له الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف
অর্থাৎ- প্রতিটি ভালো কাজের জন্য আদম সন্তানকে আল্লাহ তায়ালা দশ থেকে সাতশগুন পর্যন্ত সওয়াব দান করবেন। (স হীহ বুখারী ও মুসলিম)।
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, তিনি কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পবিত্র রমজান মাসের অপরিসীম গুরুত্ব ও মর্যাদা গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর আজানের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তোলার পক্ষপাতি ছিলেন।
আবদুল খালেক (রহ.) জুমআ, ফজর, ইশা ও রমজান মাসের আজান অন্যান্য আজানের চাইতে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে পরিবেশনের রীতি প্রমাণ করে এ বিষয়ে তিনি গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। এ বিষয়ে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ দিক-নির্দেশনা লাভ করেছিলেন। তাখসীসের ভিত্তিতে আজান পরিবেশনে যে বিজ্ঞতা ও নজিরবিহীন পারদর্শিতা তিনি দেখিয়েছেন, তাতে নির্দ্বিধায় এ কথা বলা যায় যে, তিনি হলেন ‘শাইখুল আজান’ বা ‘আজানের উস্তাদ’।