ইসলামী শরীয়াহ মুফতিদের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মুফতিগণ শরীয়াহর উপর নির্ভরশীল। মুফতিগণ শরীয়াহর আলোকে শরীয়াহ থেকে রায় উদ্ভাবন করেন। এজন্য কোন অস্পষ্ট বিষয় যা কোরআন ও সুন্নাহয় পরিস্কারভাবে উল্লেখ পাওয়া যায় না, সে বিষয়ে শরঈ সমাধানের জন্য মুফতিদের দ্বারস্থ হওয়ার নিয়ম রয়েছে; যা শরীয়াহর-ই একটি বিশেষ প্রকল্প ও নির্দেশনা। কিন্তু মুফতিদের কাছ থেকে কোন রায় গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই যোগ্যতা, গবেষণার মান ও ব্যক্তিত্বের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হয়। ঠুনকো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক এবং মাসআলা নকল (copy) করে, এমন কারো কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করা যায় না।

 

ইসলামী শরীয়াহয় মুফতিদের অবস্থান বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “মুফতিগণ নবী সা. এর প্রতিনিধি” (representative of prophet)। যাঁরা অস্পষ্ট বিষয়াবলিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে ইজতিহাদের মাধ্যমে সুস্পষ্ট করে তোলেন। ইমাম আশশাতিবী আলমুয়াফফাকাতে ও ইবনুল কাইয়্যিম ই’লামুল মুকিঈ’ন-এ অনুরূপ বলেছেন। ফলে কোন অস্পষ্ট বিষয় যখন উপযুক্ত ইজতিহাদের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে যায় তখন ঐ রায় যদি ভুলও প্রমাণিত হয়, তথাপি এজন্য পূর্ণাঙ্গ সাওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। আর যদি তা সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে সেজন্য দ্বিগুণ সাওয়াবের ঘোষণা রয়েছে। কাজেই এখানে যোগ্যতাসম্পন্ন মুফতিদের শরঈ গুরুত্ব ও মর্যাদা পরিস্কারভাবে অনুধাবন করা যায়।

 

একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, যাঁরা জনসাধারণের মাঝে জ্ঞান বিতরণের অংশ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত মাসাঈল অথবা পূর্বসূরি মুফতি যেমন সাহাবীগণ ও তাঁদের পরবর্তী মুজতাহিদ ইমামদের সমাধানকৃত মাসাঈল বর্ণনা করেন, তাঁরা মুফতি নন। বরং তাঁদেরকে দাঈ আলেম বলা যায়। ইসলামী শরীয়াহর দৃষ্টিতে প্রকৃত মুফতি কেবল তিনি, যিনি কুরআন ও সুন্নাহয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত নেই এমন কোন নতুন বিষয়ে গবেষণা (ইজতিহাদ) করেছেন এবং শরীয়াহসম্মত রায় প্রদান করেছেন।

 

ইসলামী শরীয়াহয় মুফতিদের সমকক্ষ অথবা সমদায়িত্ব সম্পন্ন আরও দুটি গ্রুপ রয়েছে। তাঁরা হলেন, কাজী এবং হাকিম (কোর্টের বিচারক)। এই তিনপ্রকার রায় প্রদানকারিদের বিষয়ে ইসলামী শরীয়াহয় বিশেষ মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি মুসলিম সমাজ থেকে কিছু মানুষকে অবশ্যই এসকল দায়িত্বভার গ্রহণ ও যোগ্যতা অর্জনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এটি শরীয়াহ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে এ অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে একইভাবে শাস্তির হুমকিও রয়েছে। এজন্য দেখাযায় উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সাহাবীদের মধ্যথেকে অনেকে ফতোয়া প্রদানের দায়িত্বভার গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন। যেমন, হজরত আবু বকর, হজরত উসমান, হজরত আবু হুরায়রা রা. প্রমুখ। আর যাঁরা এ দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন, হজরত উমর, হজরত আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. প্রমুখ।

 

 

Spread the love