প্রাণবন্ত ও প্রাণোচ্ছলকারী এক মহান দ্বীনের নাম ইসলাম। যে দ্বীন নিজেকে সুখী করতে এবং অন্যকে সুখে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। বিনোদনহীন, নিরানন্দ ও রস-কষহীন জীবন যাপন করার নাম ইসলাম নয়। ইসলাম নিজে হাসতে এবং অপরকে হাসাতে শেখায়, নিজে আনন্দ করতে এবং অপরকে আনন্দিত করতে শেখায়। সে বলে- তোমরা তোমাদের ভাইদেরকে দেখলে হাসো। এভাবে তোমরা যদি হাসো, তাহলে তা তোমাদের জন্য ‘সাদাকাহ’ বা উত্তম দান হিসাবে লেখা হবে।

“তাবাসসুম লিআখিকা” (تبسم لاخيک) অর্থাৎ তোমাদের ভাইদের জন্য হাসো -এ কথার মর্মার্থ এবং এর পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো আমরা অনেকে বুঝি না। অথচ এ কথার অর্থ অত্যন্ত সুদুর প্রসারি। যার চূড়ান্ত অর্থ হল- তোমরা তোমাদের ভাইদেরকে সুখী করো।

ধরুন, আমাদের কোন এক ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। আমরা তাকে দেখে হাসলাম। কিন্তু তাকে আমাদের এ হাসি সুখী করলো না। দেখা গেল সে হাসলো না, তার মুখটা বেজার, সে কোন বিষয়ে চিন্তিত -এমতাবস্থায় আমরা কী করবো? আমরা তাকে আরও কাছে টানবো, তাকে নিয়ে কোথাও বসবো এবং জিজ্ঞাসা করবো তার মন খারাপের কথা। এরপর আমরা তার কথা শুনবো এবং সে আলোকে তাকে আশার বাণী শুনাবো। যেভাবে সম্ভব তাকে চিন্তামুক্ত করে তুলবো এবং তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবো। এর নাম হল- তাবাসসুম লিআখিকা।

কতিপয় লোক মনে করে- ইসলাম এমন এক কাঠখোট্টা ধর্মের নাম যেখানে কোন হাসি, তামাশা, ঠাট্টা-মশকরা এবং কৌতুকের জায়গা নেই। এমনকি তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে পর্যন্ত কৌতুক করা তো দূরে থাক তাদের সাথে হাসিমুখে পর্যন্ত কথা বলাকে উচিৎ মনে করে না! ইসলাম সম্পর্কে এমন নিচু ধারণা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের মনে রাখা দরকার- সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে থাকা, কারো সাথে না মেশা, কোথাও বেড়াতে না যাওয়া এবং হাসি-ঠাট্টা না করার নাম ইসলাম নয়।

ইসলাম সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা এমন এক চিত্তাকর্ষক দ্বীনের নাম, যেখানে শিল্পকলার রয়েছে দারুণ এবং অবারিত সুযোগ। শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে নিজে আমোদিত হওয়া এবং অন্যকে আমোদিত করা তো বিশাল এক ব্যাপার। নোংরামি, পাপাচার ও অশ্লীলতা থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে আসার জন্য ইসলাম গল্প, কবিতা, গান, কৌতুক ইত্যাদির অনুমতি দিয়েছে। এই অনুমতির ক্ষেত্র অত্যন্ত সুবিশাল এবং প্রশস্ত। যে বিষয়ে অনেকের ধারণা নেই। অবশ্য তা হতে হবে অশ্লীলতামুক্ত।

অশ্লীলতামুক্ত বললে কেউ কেউ আবার ভয় পেয়ে যায় এবং থমকে দাঁড়ায়। তারা ভাবে অশ্লীলতা ছাড়া শিল্পকলার চর্চা কিভাবে সম্ভব! অথচ অশ্লীলতামুক্ত শিল্পকলারও যে ব্যাপক চর্চা হতে পারে এবং তা দিয়ে যে মানুষকে আমোদিত করা যায়, তার শতকত উদাহরণ হলেন আমাদের মুসলিম কবি-সাহিত্যিকগণ। কাজী নজরুল ইসলাম, জসিম উদদীন, কাজী মোতাহার হোসাইন, হুমায়ুন আহমেদ, আল মাহমুদ, মতিউর রহমান মল্লিক, এঁরা কী রুচিশীল এবং অশ্লীলতামুক্ত শিল্পকলার গর্বিত অংশিদার নয়? তাঁদের রচনা কি মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে না? কাজেই অশ্লীলতামুক্ত বললে ভয় পাবার কিছু নেই।

মোদ্দাকথা হল- আমরা নিজেরা হাসবো এবং অপরকেও হাসাবো, নিজেরা সুখী হবো এবং অপরকেও সুখী করবো, নিজেরা আমোদিত হবো এবং অপরকেও আমোদিত করবো -এরই নাম ইসলাম, এরই নাম দ্বীন। ইসলাম মানে বিষন্নতা নয়, ইসলাম মানে জীবনকে রস-কষহীন করে ফেলা নয় এবং ইসলাম মানে কাঠখোট্টা হয়ে যাওয়া নয়। ইসলাম হল প্রাণবন্ত এক দ্বীন।

 

Spread the love