ইসলামী শরীয়াহয় যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে রেখে আইন প্রণয়ন করা হয়, সে সকল বিষয়কে ‘মাকাসিদ আশশারীয়াহ’র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেগুলো অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও বিজ্ঞানসম্মত এবং ইসলামী আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্নততর ব্যবস্থাপনার নিদর্শন। শরীয়াহ আইনকে বুঝতে হলে এবং এর মাহাত্ম্য ও গভীরতা উপলব্ধি করতে হলে এ সকল অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। এতে শরীয়াহর প্রতিটি হুকুম তথা রায়ের যুক্তিকতা ও নৈতিকতা সম্পর্কে জানা যাবে এবং নতুন যে কোন রায়ের মেরিট, গতিপ্রকৃতি এমনকি তার শুদ্ধাশুদ্ধিও নির্ণয় করা যাবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এ সকল বিষয় হল শরীয়াহ আইন প্রণয়নের মানদণ্ড; যেগুলোকে সামনে রেখে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এর পক্ষথেকে রায় প্রদান করা হয়েছে। অতএব রায় প্রদানের ক্ষেত্রে মুফতিদেরকেও এ সকল বিষয় অগ্রাধিকার প্রদান করতে হয়। উসূলবিদদের গবেষণায় এ সকল বিষয় সুস্পষ্ট ও সুনির্ধারিত হয়েছে।
▪️ জীবনঃ
যে কোন বিষয়ে ইসলামী শরীয়াহয় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সকল কিছুর উপর মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার (priority) প্রদান করা হয়েছে। ফলে মানুষের জীবন ও জীবনঘনিষ্ঠ যাবতীয় সমস্যাবলি শরীয়াহর প্রধান আলোচ্য বিষয় ও কেন্দ্রবিন্দু।
▪️ ট্যালেন্টঃ
মানুষের জীবন রক্ষার পর শরীয়াহয় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হল মানুষের ট্যালেন্ট। ট্যালেন্ট বা বুদ্ধিবৃত্তি সুরক্ষার নিশ্চয়তাকে সামনে রেখে শরীয়াহর সমস্ত আইন প্রণীত হয়েছে।
▪️ দ্বীনঃ
দ্বীনের সুরক্ষা ও দ্বীন পরিপালন ইসলামী শরীয়াহয় ৩য় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়। ফলে এ লক্ষ্যে মানুষের জন্য সর্বস্তরে ইবাদাতের পদ্ধতি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
▪️ বংশঃ
ইসলামী শরীয়াহয় ৪র্থ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হল মানুষের বংশ রক্ষা করা। কেননা এর মাধ্যমে মানবসভ্যতা টিকে থাকে এবং মানুষের পরিচয় সমুন্নত হয়। এজন্য বিয়ে-শাদী, পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্নীয়-স্বজন, মাহরাম-গাইরে মাহরাম ইত্যাদি সম্পর্কিত বিধি-বিধান প্রণিত হয়েছে।
▪️ সম্পদঃ
ইসলামী শরীয়াহয় ৫ম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হল মানুষের সম্পদ। সম্পদ রক্ষা, এর সুষ্ঠু ব্যবহার, অপচয়, আদান-প্রদান ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়াবলি এর অন্তর্ভুক্ত।
▪️ সম্মানঃ
ইসলামি শরীয়াহয় ৬ষ্ঠ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হল মানুষের সম্মান ও মর্যাদা। ফলে মুআমিলাত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি বিষয়াবলি এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রত্যেক মুসলিমমাত্র জীবন ও জীবিকা পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহয় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এসকল বিষয়াবলী জানা অত্যন্ত জরুরি। নতুবা শরীয়াহ আইনের যুক্তিকতা, ন্যায়নীতি ও সৌন্দর্য কোনক্রমে বুঝে আসবে না এবং মুফতিদের ভুল রায় চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না।